উচ্চশিক্ষায় পড়াশোনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় জার্মানী অন্যতম। এর কারণ পড়াশোনার ক্ষেত্রে অন্য ইউরোপের অন্য দেশগুলোর তুলনায় জার্মানীতে খরচ কম। তাছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর পড়াশোনার মানের সুখ্যাতি এর অন্যতম কারণ। জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিন্তু জার্মান ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায়ও প্রোগ্রাম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। তবে ইংরেজি ভাষায় প্রোগ্রাম মূলত পোস্টগ্রাজুয়েট পর্যায়ে বেশি। পোস্টের শিরোনাম দেখেই বুঝতে পারছেন আজকে আমরা বলবো জার্মানীতে পড়ার জন্য বিদ্যমান সকল স্কলারশিপ নিয়ে। যদি জার্মানীতে পড়তে যাওয়া আপনার লক্ষ্য হয়ে থাকে তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্যই। আপনার একাডেমিক প্রোফাইল এবং পছন্দের উপর ভিত্তি করে এখানের স্কলারশিপগুলো থেকে একটি শর্টলিস্ট করে সে অনুযায়ী নিজে কে তৈরি করে ফেলুন জার্মানীর জন্য! সরকারী অর্থায়নে থাকা স্কলারশিপসমূহ দাদ (DAAD Scholarship)- The German Academic Exchange Service (DAAD) আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন রকমের স্কলারশিপ বা ফান্ড দিয়ে থাকে। বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য পোস্টগ্রাজুয়েট লেভেলে এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যায়। স্কেম ভেদে মাসিক স্টাইপেন্ডসহ বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়। চট করে দাদ স্কলারশিপ ডাটাবেজ থেকে দেখে নিন বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা দাদের কোন কোন স্কলারশিপের জন্য এখন আবেদন করতে পারছে। ইরাসমাস মুন্ডুস স্কলারশিপ- ইউরোপে পড়াশোনার ক্ষেত্রে যেসব স্কলারশিপ দেয়া তার মধ্যে সবথেকে নাম-ডাক যে স্কলারশিপ তার নাম ইরাসমাস মুন্ডুস স্কলারশিপ। ইউরোপীয় কমিশন এই স্কলারশিপটি প্রদান করে থাকে। বিমান টিকেট থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ হয়ে যায় এই একটি স্কলারশিপে। তবে এই স্কলারশিপের আওতাভুক্ত প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা পোস্টগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে এই স্কলারশিপটির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সাধারণত আগস্টঁ থেকে জানুয়ারী পর্যন্ত ইরাসমাস মুন্ডুস স্কলারশিপের আবেদন নেয়া হয়। ফাউন্ডেশন/ বেসরকারী অর্থায়নে থাকা স্কলারশিপসমূহ আইনস্টাইন ইন্টারন্যাশনাল পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপ- আইনস্টাইন ফাউন্ডেশন বার্লিন এই ফেলোশিপটি দিয়ে থাকে। ক্ষেত্রভেদে ৫ বছর পর্যন্ত এই ফেলোশিপ নেয়া যায়। যারা ইতিমধ্যে পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ডিং পেয়ে গেছে তারাও এই ফেলোশিপের জন্য আবেদন করতে পারে। এই ফেলোশিপ মূলত গবেষণাকে উৎসাহিত করতে দেয়া হয়ে থাকে। এই ফেলোশিপের বিস্তারিত পাবেন এখানে। হেইনরিখ বোল স্কলারশিপ- হেইনরিখ বোল ফাউন্ডেশন এই স্কলারশিপটি দিয়ে থাকে। বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা জার্মানীতে মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য এই স্কলারশিপে আবেদন করতে পারবে। তবে শর্ত হলো জার্মান ভাষা জানা থাকতে হবে। সেমিস্টার শুরু করার ঠিক আগমুহূর্তে আবেদন করতে হয়। জানুয়ারী থেকে ১ মার্চের মধ্যে সাধারণত আবেদন করা যায়। বিস্তারিত দেখুন এখানে। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলোশিপ- এই ফেলোশিপটি পোস্টডক্টরাল রিসার্চের ক্ষেত্রে দেয়া হয়ে থাকে। আলেকজান্ডার ভন হামবোল্ট ফাউন্ডেশন প্রতিবছর ৪০০-৫০০ জন পোস্টডক্টরাল রিসার্চারকে এই ফেলো শিপ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা এই ফাউন্ডেশন থেকে দেয়া জর্জ ফরস্টার রিসার্চ ফেলোশিপের জন্যও আবেদন করতে পারবে। এটি প্রতিবছর প্রায় ৭৫ জনকে দেয়া হয়ে থাকে। বিস্তারিত পাবেন এখানে। কনরাড আডেনেউর স্টিফটাঙ্গ স্কলারশিপ- বয়স৩০ বছরের নিচে এমন শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স এবং পিএইচডির কোর্সের ক্ষেত্রে এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। কনরাড আডেনেউর স্টিফটাঙ্গ স্কলারশিপের আওতায় মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য ২ বছর পর্যন্ত মাসে ৮৩ হাজার টাকা স্টাইপেন্ড পাওয়া যাবে। এছাড়াও আবেদনকারীর সাথে তার পরিবার বা সন্তান জার্মানীতে অবস্থান করতে চাইলে তাদের জন্যও আলাদা বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে। আরো জানতে অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। কার্ল ডুসবার্গ স্কলারশিপ- যারা মেডিকেল সায়েন্স, মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিসিন, ভেটেরিনারি মেডিসিন, পাবলিক হেলথ, হেলথ ইকোনমিকসে রিসার্চের কথা ভাবছেন তাদের জন্য এই ফেলোশিপ প্রোগ্রামটি। মাস্টার্স, পিএইচডি কোর্সের যেকোনো রিসার্চ প্রজেক্টের ক্ষেত্রে এই ফেলোশিপের জন্য আবেদন করা যাবে। এছাড়া বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে আরো কয়েকটি ফেলোশিপ দিয়ে আসছে বায়ের ফাউন্ডেশন। এগুলোর বিস্তারিত পাবেন এখানে। মেরী কুরি ইন্ট্রান্যাশনাল ইনকামিং ফেলোশিপ- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির রিসার্চ প্রজেক্টগুলোতে বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের মেধাবী রিসার্চারদেরকে এই ফেলোশিপ দিয়ে থাকে ইউরোপীয় কমিশন। জার্মানী ছাড়াও ইউরোপের অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রেও এই ফেলোশিপের জন্য আবেদন করা যায়। এই ফেলোশিপের আওতায় ১২-১৪ মাস পর্যন্ত মাসিকভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা পাবেন। মেরী কুরি ইন্ট্রান্যাশনাল ইনকামিং ফেলোশিপ প্রোগ্রামের হোমপেজ। মাউইস্তা স্কলারশিপ- যারা জার্মানীতে সন্তান সাথে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছেন তাদের জন্যই মূলত মাউইস্তা স্কলারশিপ। অনেক্ষেত্রেই পড়াশোনা এবং থাকা-খাওয়ার খরচ ম্যানেজ হলেও সন্তানকে সাথে রাখার আর্থিক সঙ্গতি হয় না। নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি আপনার সন্তানের দেখভালও যাতে ঠিকমত করতে পারেন এজন্য ১২ মাস পর্যন্ত মাসে ৫০০ ইউরো করে স্টাইপেন্ড দেয়া হয় এই স্কলারশিপের আওতায়। আবেদন করার পদ্ধতিসহ এই স্কলারশিপের বিস্তারিত দেখুন এখানে। ডাচল্যান্ড স্টাইপেন্ডিয়াম- জার্মানীতে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট থেকে শুরু করে পোস্টগ্র্যাজুয়েট লেভেলের যেকোনো বিষয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে ডাচল্যান্ড স্টাইপেন্ডিয়াম এর জন্য আবেদন করা যায়। এট মেরিট-বেজড স্কলারশিপ। তাই এই স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে একাডেমিক ফলাফল বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই স্কলারশিপের আওতায় প্রতি মাসে ৩০০ ইউরো স্টাইপেন্ড দেয়া হয়। বিস্তারিত এখানে পাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভ্যন্তরীণ স্কলারশিপ ফ্রাঙ্কফ্রুট স্কুল অব ফাইন্যান্স এন্ড ম্যানেজমেন্ট ডক্টরাল টিউশন ওয়েভার- ফ্রাঙ্কফ্রুট স্কুল অব ফাইন্যান্স এন্ড ম্যানেজমেন্ট এর ফাইন্যান্স, ম্যাথম্যাটিকস, একাউন্টিং এবং বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনে ইংরেজি ভাষায় ডক্টরাল করার ক্ষেত্রে পুরো টিউশন ফি কভার করার জন্য এই টিউশন ওয়েভার দেয়া হয়ে থাকে। চার বছর মেয়াদী এই ডক্টরাল কোর্সগুলোতে প্রতি বছর ১০ জনকে এই টিউশন ওয়েভার দেয়া হয়ে থাকে। কোর্সগুলোর বিস্তারিত এখানে গিয়ে চট করে দেখে ফেলতে পারেন। কফি আনান এমবিএ স্কলারশিপ- বার্লিনে অবস্থিত ইউরোপিয়ান স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট এন্ড টেকনোলজিতে এমবিএ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীরা শুধু এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারে। প্রতি বছর ৫ জনকে এই স্কলারশিপ দেয়া হয়ে থাকে। টিউশন ফি ছাড়াও মাসিক স্টাইপেন্ড দেয়া হয় এই স্কলারশিপের আওতায়। এই স্কলারশিপসহ ইউরোপিয়ান স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট এন্ড টেকনোলজিতে এমবিএ এর বিদ্যমান স্কলারশিপগুলোর খবর পাবেন এখানে । এর বাইরেও আরো কিছু স্কলারশিপ এবং ফেলোশিপ রয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো এই পোস্টটিতে নিয়মিত তথ্য যোগ করে আরো সমৃদ্ধ করতে। তাই প্রয়োজনবোধে এই পোস্টটি আপনার ব্রাউজারে বুকমার্ক করে রাখতে পারেন। আমাদের ফেসবুক পেজটি "See first" দিয়ে রাখতে পারেন। |