যখন বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ক্রমাগত বিশ্ববিদ্যালয় ফি বাড়ছে, কেউ কেউ হয়তো ভাবতে পারেন যে বাইরে ভালোমানের স্বীকৃত একটা ডিগ্রী স্কলারশিপ বা কাড়ি কাড়ি টাকা ছাড়া প্রায় অসম্ভব। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে এটা সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অনেক দেশেই ভিনদেশী শিক্ষার্থীরা সম্পুর্ন বিনাখরচে বা খুবই কম খরচে পড়তে পারে। আপনাকে শুধু জানতে হবে কোথায় সেগুলোকে খুজবেন। জার্মানি জার্মানিতে পড়াশোনার ব্যাপারে ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের আগ্রহ দিনদিন বাড়ছে। এর বড় কারণ হচ্ছে জার্মানির প্রায় সব পাবলিক আন্ডারগ্র্যাজুয়েট সহ সব প্রোগ্রামে কোনো টিউশন ফি নেই। জি, ঠিক শুনেছেন। কোনো টিউশন ফি নেই। শুধু কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নামমাত্র প্রশাসনিক ফি হিসেবে ১৬ হাজার থেকে ২৬ হাজার টাকা নেয়া হয়ে থাকে। ব্যতিক্রম শুধু বাদেন-উর্টেমবার্গ রাজ্য। তারা নন-ইউরোপিয়ান শিক্ষার্থীদের জন্য সম্প্রতি সেমিস্টার প্রতি টিউশন ফি প্রায় দেড় লক্ষ টাকা নির্ধারন করেছে। তবে রিফিউজি এবং পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য আগের সুবিধাই বহাল রেখেছে রাজ্যটি। জার্মানিতে কম খরচের সাথে এর শক্তিশালী অর্থনীতি এবং চমৎকার উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উভয়ের কাছেই একে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। জার্মানিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজার পর আপনাকে লিভিং কস্ট হিসাব করতে হবে। টিউশন ফি ফ্রি হলেও থাকা-খাওয়ার খরচ আপনাকে বহন করতে হবে। স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আপনাকে প্রমাণ দেখাতে হবে যে আপনি বছরে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা খরচ করার সামর্থ্য রাখেন। কেউ যদি ভাষাসহ পুরো ব্যাচেলর জার্মানিতে শেষ করতে চায়, তার জন্য কমপক্ষে ৫-৬ বছর প্ল্যান করতে হবে (এখানে ধরে নেওয়া হচ্ছে সব কোর্স ও পরীক্ষা সময়মত পাস করা হবে –এই সাপেক্ষে)। প্রায় সব শহরেই এখন ব্লক একাউন্ট করতে হয়, যার পরিমাণ বছরে প্রায় ৮,০০০ ইউরো। ৫ বছর ধরে এই বিপুল পরিমাণ খরচের নিয়মিত যোগান দেয়া খুব সহজ কাজ নয়। আরও খেয়াল রাখতে হবে যে, ভাষা শেখার সময় ভার্সিটিতে ভর্তির আগ পর্যন্ত প্রাইভেট বাসা নিজে খুঁজে বের করতে হয় এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই স্টুডেন্ট হোস্টেলের থেকে অনেক বেশি খরচে থাকতে হয়। ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট হবার পর যেখানে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে খুব কম খরচে চলাফেরা সম্ভব, সেখানে ল্যাংগুয়েজের ছাত্রদের কয়েকগুণ বেশি পয়সা দিয়ে টিকেট কাটতে হয়। অনেকেই স্বপ্ন দেখে অড-জব করে খরচ পোষানোর কথা। অড-জব করে হয়তো কিছু খরচ পোষানো সম্ভব, কিন্তু ধারাবাহিকভাবে বছরের পর বছর পড়াশোনার পাশাপাশি জব করে খরচ পোষানো প্রায় অসম্ভব কল্পনা। মাস্টার্স স্টুডেন্টরা যেমন ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ জব পায়, সেটা ব্যাচেলর স্টুডেন্টদের জন্য সম্ভব নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য প্রথম দুই বছরের কোর্স শেষ করার পর এই জাতীয় জব পাওয়া যেতে পারে। তারপরও পড়ার পাশাপাশি যে অবসর সময় পাওয়া যায়, সেখানে কাজ করে হয়তো মোট খরচের ৫০ শতাংশ আয় করা যেতে পারে। পুরো খরচও কোন কোন ক্ষেত্রে তোলা সম্ভব, তবে সেই ক্ষেত্রে পড়াশোনা ঠিক থাকবে না, সেটা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার হল, প্রথম দুই বছর টিকে থাকা। যারা ভাষা শিখতে আসে, তাদের জন্য কোন ওয়ার্ক পারমিট থাকে না। স্টুডেন্টকলিগ পাস করে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবার পরই শুধুমাত্র নরমাল স্টুডেন্ট কাজের পারমিট পাওয়া যায় (বছরে ১২০ দিন)। কোন কোন শহরে ভাষা শেখার সময়ও কাজের পারমিশন পাওয়া যায়, শুধুমাত্র ছুটি চলাকালীন সময়ে। তবে কাজের পারমিট পাওয়া আর কাজ পাওয়া এক নয়। যেহেতু ব্যাচেলর লেভেলে ছাত্রছাত্রীরা সাধারণত কোন বিষয়ে দক্ষ নয়, তাদেরকে অড জব খুঁজতে হয়, এবং অড জবের জন্য যেটা প্রয়োজন তা হল ভাষার দক্ষতা। ব্যাচেলরে জার্মানিতে পড়তে আসার জন্য সবচেয়ে বড় ব্যারিয়ার ভাষা এবং পড়ার পাশাপাশি খরচ চালিয়ে যাওয়া। যারা দেশে কয়েক বছর ভাষা শিখে ও জার্মানির কালচার বুঝে অন্তত প্রথম দুই বছরের খরচ নিয়ে আসতে পারবে এবং দীর্ঘ সময় ধরে পড়াশোনার মোটিভেশন ধরে রাখতে সক্ষম, তাদেরই শুধুমাত্র জার্মানিতে ব্যাচেলর পড়তে আসা উচিত। এদের ভবিষ্যতে সফল হবার সম্ভাবনা মাস্টার্স স্টুডেন্টদের থেকেও অনেক ভাল, কারণ এরা পড়াশোনা শেষ করবে ভাষা ও লোকাল কালচারে অভ্যস্ত হয়ে। ইংরেজি স্পোকেন দেশগুলির সাথে যদি তুলনা করা যায়, তাহলে জার্মানিতে ব্যাচেলর করা অনেক অনেক গুন ভাল সিদ্ধান্ত দুইটি কারণে। প্রথমত বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানিতে কোন টিউশন ফি দিতে হয় না, এবং এদেশে পাস করার পর চাকরির বাজার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভাল। তবে একটাই পূর্বশর্ত, জার্মান ভাষা জানা! নর্ডিক দেশ নর্ডিক বা নর্দান ইউরোপিয়ান দেশ গুলো তাদের উন্নতমানের জীবনযাপন, স্নিগ্ধ প্রকৃতি এবং উদার রাজনীতির জন্য যেমন পরিচিত তেমনি তাদের শক্তিশালী শিক্ষাব্যবস্থার জন্য সমাদৃত। নরওয়েতে জার্মানির মত টিউশন ফি নেই। সেমিস্টার চার্জ দেয়া লাগে গড়ে মাত্র ৫ হাজার টাকা। এছাড়া মাস্টার্স এবং পিএইচডি লেভেলে কিছু প্রোগ্রাম ইংরেজিতে পড়ার সুযোগ রয়েছে। আইসল্যান্ডের ৪ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো টিউশন ফি নেই। রেজিস্ট্রেশন ফি বছরে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। ডেনমার্ক, সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডে ফুল ফান্ডেড পিএইচডি করা যাবে। এছাড়া স্কলারশিপতো আছেই। স্কলারশিপের খবর আমাদের ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজে নিয়মিত পাবেন। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে পড়াশোনার ব্যাপারে সুযোগ এবং সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলার জন্য আগস্টের শেষ সপ্তাহে আমরা সেমিনার আয়োজন করছি। সেমিনারের বিস্তারিত পাবেন এখানে |